মাশরাফি-তামিম-সাকিবদের ‘ব্যাকআপ’?

স্পোর্টস ডেস্ক : ক্রিকেটে ভালো সময় যেমন আসতে পারে তেমনি খারাপ সময়ও আসতে পারে। সাফল্যের সময় যেমন অতি আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই তেমনি সুযোগ নেই পরাজয়ের হতাশা আঁকড়ে ধরে বসে থাকার। নতুন সূর্য উঠবে বলেই তো রাতের আঁধার নামে। তাই এখন থেকেই ২০১৯ বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে হবে।

আর সেই প্রস্তুতির জন্য তৈরী রাখতে হবে ‘ব্যাকআপ’ ক্রিকেটার। কেননা এক সাকিব-মাশরাফি-রিয়াদরা সারা জীবন ক্রিকেট খেলবেন না। একদিন অবসর নেবেন। আর তাঁরা না থাকলে কি হতে পারে তা আমরা সেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই দেখে আসছি। সবশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজে সাকিব ইনজুরিতে পড়ায় পুরোপুরি ভূত দেখার মত চমকে ওঠে টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। এক সাকিবের বদলি খুঁজতেই কত নাটক।

তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নতুন চিন্তা, বিদেশি কোচ দিয়ে সাহায্য করবে বিকেএসপিকে। লক্ষ্য একটাই ভালো মানের ক্রিকেটারদের একটা পাইপলাইন তৈরী করা, যারা পরবর্তিতে জাতীয় দল, এ দল কিংবা বয়সভিত্তিক দলগুলোকে সার্ভিস দেবে। আর বিকেএসপিও রাজি বিসিবির এই প্রস্তাবে। তাই কোচ নিয়োগের কাজও খুব দ্রুতই শুরু করতে চায় বিসিবি।

একটা পাইপলাইন না হয় তৈরী হল। কিন্তু সেই ক্রিকেটারদের খেলায় পরিপক্কতা আসার আগেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামিয়ে দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? বিষয়টা এমন যুদ্ধে এখনই নামতে হবে নাহলে সব হাতছাড়া! উদাহরণ হিসেবে- ‘ভবিষ্যতের সাকিব’ তকমা পাওয়া আফিফ যখন নিজেকে আরও শাণিত করে নিতে প্রস্তুত হচ্ছে, ঠিক তখনই তাঁকে কেন টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক করানো হলো? কিন্তু এক ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় ম্যাচেই সে বাদ। যে খেলোয়াড়টিকে আমরা ‘ভবিষ্যতের সাকিব’ বলছি, তাঁকে এক ম্যাচ খেলিয়েই বসিয়ে দেওয়ার জুক্তিকতা কি?

তাই ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, সাকিব-মাশরাফিদের ‘ব্যাকআপ’ ক্রিকেটারদের বাছাই করে তাঁদের নিয়ে আলাদাভাবে ক্যাম্প করা যেতে পারে। একই সঙ্গে তাদেরকে কোনো ভাবেই ২০-২২ বছরের আগে জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া যাবে না। যেমন, অনূর্ধ্ব-১৭ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে সেরা ১৫ জন ক্রিকেটার বাছাই করে তাঁদের আলাদাভাবে অনুশীলন করিয়ে, একটা সময় পরে তাঁদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নামানো যেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে সেই ১৫ জন ক্রিকেটার ‘এ’ দল, বয়সভিত্তিক দল কিংবা হাইপারফরমান্স দলের হয়ে দেশে অথবা বিদেশে ম্যাচ খেলবে। আর ঘরোয়া লিগগুলো তো আছেই। তখন ধীরে ধীরে তাঁরা নিজেদের আরও শানিত করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরোপুরিভাবে নিজেদের মেলেও ধরতে পারবে। উদাহরন হিসিবে শ্রীলঙ্কার রোশন সিলভা এবংদাসুন সুনাকার কথা বলা যেতে পারে। সিরিজ চলাকালীন লঙ্কান ধারাভাষ্যকার রোশান বার বার বলছিলেন কিভাবে এই দুজন ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুর দিকেই এতটা ভালো খেলছেন। তাঁদের দুজনের অভিষেকই হয়েছে ২৪ বছরের পর। তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের নিজেদের পরিণত করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে তাঁরা। আর তার প্রতিফলন দেখা যায় জাতীয় দলের জার্সিতে এদের পারফরম্যান্সে।

ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তাদের মাটিতে আমরা সিরিজ জিতেছি। কিন্তু দলে এখনও অনেক উন্নতি জায়গা আছে। আর তাই খুব বড় গলায় বলা যবে না যে ২০১৯ বিশ্বকাপে ২০১৫ বিশ্বকাপ কিংবা ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মত কিছু হবে। বিশ্বকাপের বাকি আছে এক বছরের মত। তাই এখনই এই ব্যাপারে বিসিবির পরিকল্পনা নেয়া উচিত বলেই মনে করছেন দেশের ক্রিকেট বিশ্লেষকরা।